কবির আহমদ ফারুক :
ঢাকা-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’পাশে জুড়ে প্রসিদ্ধ চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার৷ সড়কের উত্তর পাশ ঘেঁষে অবস্থিত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্যে প্রতি বছর বিদ্যালয়টি এসএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ স্থান অর্জন করে একটি অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত৷ দেশের বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা বরাবরই ভালো ফলাফল করে থাকে৷ এর পিছনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির গুনগতমান সম্পন্ন শিক্ষাদানের প্রচেষ্টা৷

লক্ষ্মীপুর সদর পূর্বাঞ্চল ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের মাঝে বিদ্যালয়টির সুনাম সর্বত্র ছড়িয়ে আছে৷ এ অঞ্চলে সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় আজ অসীম যাত্রায় সসীম অগ্রগতি ও সাফল্যের উচ্চ শিখরে৷ ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরিতে অনন্য ভূমিকা রেখেছে৷ এ বিদ্যালয়টি সুদীর্ঘকাল ধরে এ অঞ্চলের জনগণের মাঝে বিতরণ করেছে আলোক শিখা। এখান থেকে বেরিয়ে অনেকেই স্বনামধন্য হয়েছেন, দেশ ও জাতিকে করেছেন গৌরবান্বিত। ইতিপূর্বে বিদ্যালয়টি দেশ ও জাতিকে অসংখ্য মেধাবী ও কৃতি ছাত্র-ছাত্রী উপহার দিয়েছে৷

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক- মৌলভী আবদুল ওয়াহেদ মিঞা ১৯৩৪ খিস্টাব্দে ১০নং চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বসুদুহিতা গ্রামের প্রতাপগঞ্জ মিঞা বাড়ির দিঘির উত্তর পাড়ে ঈদগাহ মাঠে প্রতিষ্ঠা করেন প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়৷ তখনকার সময় পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বাধার মুখে সাধার ঘর নামক স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ করে দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল৷ অনেক প্রতিকূলতা এড়িয়ে সর্বশেষ ১৯৫২ খিস্টাব্দে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয় দেওপাড়া গ্রামস্থ চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজারে৷ মৌলভী আবদুল ওয়াহেদ ১৫ জুলাই ১৮৭০ খিস্টাব্দে নোয়াখালী জেলা সদরের সুধারাম মডেল থানার ১নং চরমটুয়া ইউনিয়নের চরমটুয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পিতা শাহ্ আবদুল্লাহ্ (আব্দুস্ সামাদ) যিনি বুড়া হযরত নামে সমাধিক পরিচিত৷ তাঁর মাতা জোবেদা খানম৷ তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান৷ আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৮৯২ খিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন৷ তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন৷ তিনি কাজেম আলী হাই স্কুল, মুসলিম সরকারি হাই স্কুল, কলেজিয়েট স্কুলে (চট্রগ্রাম) শিক্ষকতা করেন৷ সর্বশেষ তিনি নোয়াখালী জেলা স্কুলের সুপারিন্টেডেন্ট ছিলেন এবং তথা হতে চাকরি জীবন শেষ করেন৷ ১৯৩৪ খিস্টাব্দে লক্ষ্মীপুর সদরের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ‘প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন৷ একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজ সেবক হিসেবে নোয়াখালীতে তাঁর পরিচিতি ছিল সর্ব মহলে৷ ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ খিস্টাব্দে ইন্তকাল করেন৷
ইসলাম প্রচারের উদ্দেশে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে নোয়াখালী জেলা সদরের চরমটুয়া গ্রাম থেকে চন্দ্রগঞ্জে আসেন মৌলভী আবদুল ওয়াহেদ মিঞা, তাঁর সহোদর ৩ ভাই ও পরিবার পরিজন৷ এই বাংলাদেশে যারা ধর্ম প্রচার করেছেন, দ্বীন প্রচার করেছেন তাঁদের মধ্যে মৌলভী আবদুল ওয়াহেদ মিঞার পরিবারের মতো পীর-মাশায়েখদের অবদান অনস্বীকার্য৷ বিদ্যালয়টি ২ একর ৭৫ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। ৭৬ শতাংশ জমির মধ্যে ২ টি দ্বিতল ভবন, ০৩ টি পাকা ভবন, ৫০ শতাংশ জমির উপর ৩৮ টি দোকান, ০৩ শতাংশ জমির উপর ০১ টি মসজিদ, ৯৬ শতাংশ জমির উপরে মাঠ, ৩০ শতাংশ পরিমান একটি পুকুর রয়েছে।
২০২২-২৩ সনের ম্যানেজিং কমিটিতে আছেন; আলহাজ্ব এম. আলাউদ্দিন- সভাপতি, মোঃ সিরাজুল ইসলাম- সদস্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক৷ নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য- মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মামুনুর রশিদ, আব্দুল হালিম ও এনামুল হক রতন৷ এ ছাড়া দাতা সদস্য মো. আবদুল কুদ্দুছ, কো-অপ্ট সদস্য কাজী মো. মোস্তাফা- সদস্য সংরক্ষিত মহিলা সদস্য উম্মে সালমা, শিক্ষক প্রতিনিধি মীর মো. আবদুল মাজেদ, মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ এবং সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি মনিকা রানী পাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷
এদিকে করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থী, নীতিনির্ধারক তথা শিক্ষাব্যবস্থাপক ও শিক্ষকদের আন্তরিকতা, পরিকল্পনা ও সমন্বয়শীলতা প্রয়োজন; বিশেষত শিক্ষকদের ওপর এর সফলতা অনেকাংশেই নির্ভরশীল। আমরা আশা করব, করোনাকালের শিক্ষা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার অনিবার্যতা অনুভত হবে। সবাই মিলে শিক্ষাই যে জাতির মেরুদণ্ড, এই আপ্তবাক্য সফল করবেন – এটাই সবার প্রত্যাশা।