নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাড়ছে করোনা সংক্রমন ও মৃত্যুর হার। এতে করে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের। করোনা ইউনিটে তিনটি আইসিইউ বেড থাকলেও পরিচালনার জন্য নেই দক্ষ জনবল। এতে করে সবসময় আইসিইউ সুবিধা পাচ্ছেনা রোগীরা। পাশাপাশি রয়েছে অক্সিজেন সংকট। আইসিইউ ও শয্যা সংকটের কথা স্বীকার করে চিকিৎসকরা বলছেন, সময় মতো চিকিৎসা দিতে না পারায় আশংকাজনকহারে বাড়ছে সংক্রমন ও মৃত্যুর সংখ্যা। তবে সিভিল সার্জন ডা: আবদুল গফ্ফার ও সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরীর নয়ন বলছেন, সার্বিক সুবিধা বাড়ানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তারা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি নিয়ে প্রতিদিনই অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালে। এদের মধ্যে পজেটিভ রোগীদের স্থানান্তর করা হয় করোনা ওয়ার্ডে। আবার করোনা আক্রান্ত রোগীদেরও সরাসরি ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। স্থান সংকুলন না হওয়ায় ফ্লোরেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। এমন পরিস্থিতি জেলার অন্যান্য হাসপাতাল গুলোতেও। প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ আলম, মামুনুর রশিদ ও করোনা আক্রান্ত রোগীর স্বজন হুমায়ুন কবির ও মো. ইউসুফ হোসেন জানান, সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিটে তিনটি আইসিইউ বেড থাকলেও পরিচালনার জন্য নেই দক্ষ জনবল। এছাড়া জেলা ও উপজেলা সরকারী হাসপাতাল বা বেসরকারী কোন হাসপাতালে নেই আইসিইউ বেড। পাশাপাশি রয়েছে অক্সিজেন সংকট। সদর হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় চরম ভোগান্তিতে রোগী ও তার স্বজরা। এতে করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে রোগী ও স্বজনরা।
লক্ষ্মীপুর জেলা কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রাজু হাওলাদার জানান, তার মায়ের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বুধবার সকালে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোন বেড না থাকায় ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। যেখানে মানুষ চিকিৎসা নেয়ার জন্য হাসপাতাল ভর্তি হয়। সেখানে আরো অনেক বেশি অসুস্থ্য হতে হয়। শয্যা ও চিকিৎসক সংকটের কারনে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে করোনা আক্রান্ত রোগী ও তার স্বজনরা। একই অভিযোগে করেছেন জেলা বেসরকারী প্যাথলজি মালিক সমিতির সহ-সাধারন সম্পাদক মো. দিদারুল আলম বাসার।
লক্ষ্মীপুরে গত জুলাই মাসে পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩৩.৬। ৬ হাজার ৬শ ১৯ জনের মধ্যে আক্রান্ত হয় ২ হাজার ১৮৮জন। কিন্তু আগস্ট মাসের শুরুতে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৪০। কিন্তু গত কয়েকদিনে কিছুটা কমে আসলেও আবারো বাড়ার আশংকা করছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ১৭দিনে ৬ হাজার ৩শ ৭২জনের নমুনা পরিক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ১ হাজার ৯শ ৮৬জন। গড়ে শনাক্তের পরিমান ৩১.২ শতাংশ। জেলার ৫টি উপজেলাগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায়ই আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা বেশী। ১৭ আগষ্ট পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৫শ ৫৫জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৮৭জন ও উপসর্গ নিয়ে মারা যায় ১শর বেশি মানুষ।
আইসিইউও শয্যা সংকটের কথা স্বীকার করে করোনা ইউনিটে দায়িত্বেরত চিকিৎসক মাজহারুল ইসলাম মাসুম বলেন, সময় মতো চিকিৎসা দিতে না পারায় আশংকাজনকহারে বাড়ছে সংক্রমন ও মৃত্যুর সংখ্যা। পাশাপাশি দক্ষ জনবল না থাকায় আইসিইউ বেড পরিচালনা করা যাচ্ছেনা। সিট সংকটের কারনে করোনা ইউনিটে রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবী চিকিৎসকদের।
সিভিল সার্জন ডা: আবদুল গফ্ফার বলেছেন, মানুষের অসচেতনতার কারনে কঠোর বিধি নিষেধের সুফল পাওয়া যায়নি। ১০ আইসিইউ বেডের বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরীর নয়ন বলছেন, সার্বিক সুবিধা বাড়ানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন ও অক্সি মিটার বিতরন করা হয়েছে। যেন কোন করোনা রোগী চিকিৎসা নিতে সমস্যার মধ্যে পড়তে না না হয়, সেদিকে সবার দৃষ্টি রয়েছে বলে দাবী করেন সাংসদ এডভোকেট নরুউদ্দিন চৌধুরী নয়ন।