More

    বেপর্দা নারীও এখন মাস্ক হিজাবী

    প্রকাশ:

    ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে৷ নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখতেই ইসলাম তাদের উপর আরোপ করেছে পর্দা পালনের বিধান। কোনো প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য পর্দা ফরজ করেনি। আর এই আবরণ যেন এমন হয় যাতে মহিলাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না পায় এবং কোনো অপমানের কারণ যেন না হয়৷

    এ বিষয়ে পবিত্র কোরআন এবং সহিহ হাদিসের আলোকে আলোচনা করলে তা দীর্ঘ হবে৷ তাই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় চেষ্টা করবো মূল বিষয়টি তুলে ধরতে৷ কয়েকদিন পূর্বে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে লক্ষ্মীপুর থেকে চন্দ্রগঞ্জ আসার সময় দু’টি মেয়ে আমার পাশে বসে৷ দু’জনই গল্প করতে করতে হঠাৎ একজন অন্যজনকে প্রশ্ন করলো, কিরে তোকে তো আগে কখনো নেকাব পরতে দেখিনি; তোর নাকি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়! এখন কি করে ডাবল মাস্ক ব্যবহার করছ? ঠিক এত টুকু কথার সূত্রে আজকের আলোচনা৷

    আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১)৷

    লক্ষ্য করুন বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে নারী-পুরুষ সবাই মাস্ক ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে৷ কিন্তু এখানেই আমার প্রশ্ন; যে নারীগণ একটা সময় নেকাব ব্যবহার করতো না শ্বাস বন্ধ হওয়ার অজুহাতে, এখন তারা কি করে মাস্ক ব্যবহার করছে? সহজ ভাষায় বললে এরা বেঁচে থাকতে চায়৷ তাই করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ব্যবহার করছে কিন্তু ধর্মীয় আদর্শে আজও নিজকে পরিবর্তন করতে পারে নাই৷

    ভুলে গেলে চলবেনা সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল৷ তাই মুখে মাস্ক ব্যবহার করার অর্থ এই নয় আপনি পর্দা করছেন৷ কেননা শ্বাস বন্ধ হওয়ার অভিযোগে কিছুদিন আগেও নেকাব ব্যবহার করেন নাই৷ এখন করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে বোরকা না পরে নিজেকে মাস্ক হিজাবী মনে করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়৷

    কেননা প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘যাবতীয় আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির তা-ই প্রাপ্য হয়, যার সে নিয়ত করে থাকে। যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব কোন বিষয় লাভের উদ্দেশ্যে হয়, সে ব্যক্তির তা-ই প্রাপ্য হয়। যার হিজরত কোন মহিলাকে বিবাহ্‌ করার উদ্দেশ্যে হয়, তার প্রাপ্যও তাই। যে যে নিয়তে হিজরত করবে সে তাই পেয়ে থাকবে।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১নং) এই সময়ে মাস্ক কোন পর্দা নয়৷ শুধু তাই নয় আধুনিকতার নামে সম্পূর্ণ শরীর না ঢেকে ওড়না দিয়ে মাথায় বিভিন্ন ডিজাইন করাকে হিজাব বলে চালিয়ে দিচ্ছে অনেক মেয়ে৷ যদিও পবিত্র কোরআন এবং সহিহ হাদিসের আলোকে তা পর্দা বলে গণ্য হবেনা৷

    আজকের চলমান বিশ্বে নারী কেলেঙ্কারির নামে অনেক কিছুই ঘটে চলছে স্বামীর অনুপস্থিতিতে, দেবর ও অন্যের সাথে অসংকোচে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে লজ্জাকে বিসর্জন দিয়ে আস্তে আস্তে অবৈধ সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হয়। এগুলো লজ্জাহীনতার ফসল। দেশে অহরহ ধর্ষণ আর যৌনতার ছড়াছড়ি নারীর অবাধ চলাচল এবং নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতারই ফল। পর্দা শব্দটি ইসলামের বিধিবিধানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইসলাম মানুষের জন্য এমন কিছু ফরজ নিয়মকানুন করে দিয়েছে যা পালনে বেহেশতি সুখ পৃথিবীতেই অনুভূত হয়। আর এর লঙ্ঘনের ফল হয় অশান্তি আর চিরস্থায়ী জাহান্নাম। হে আল্লাহ আপনি আমাদের সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন (আমিন)৷

    আনোয়ার হোসেন
    লেখক ও সাংবাদিক