জন্মের পর থেকে প্রতিটি মানুষ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত স্বপ্নকে বুকে নিয়ে বেঁচে থাকে। প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে যদি কেউ (আত্মহত্যা করে) মারা যায় তবে বুঝে নিতে হবে; তার মৃত্যুর পূর্বে স্বপ্নগুলোর মৃত্যু হয়। প্রতিটি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য বহু চেষ্টা এবং কষ্ট সহ্য করে থাকে। তাহলে কেন সেই মানুষটি আত্মহত্যার পথ খুঁজে নেয়। কারন স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারেনা। স্বপ্ন কে যদি ‘অলীক কামনা’ বলা যায়; তবে বুঝতে সহজ হয়ে যায় মানুষের মাঝে ‘কামনা’র আগ্রহ কখনো কমে না। এমন কি যে মানুষটি মৃত্যু শয্যায়; সেও স্বপ্ন দেখে/কামনা করে।
ব্যর্থতা, হতাশা, দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক ও বিপদ-আপদ মানব জীবনের স্বাভাবিক ও চলমান অনুষঙ্গ। এই সবকিছুর মধ্যে আল্লাহর কল্যাণকর ও শিক্ষণীয় কিছু বিষয় লুক্কায়িত রেখেছেন। যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা ও বাস্তবসম্মত জ্ঞানের অভাবে যা আমরা অনুধাবন করতে পারি না। অনেকক্ষেত্রে অনুধাবন করার চেষ্টাও করি না। স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। তাইবলে, স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়, স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়ে চলো। স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন। পবিত্র কোরআন বর্ণিত হযরত আইয়ূব (আঃ), হযরত ইউসুফ (আঃ), হযরত হাযেরা (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত আছিয়া (আঃ), হযরত মারঈয়াম (আঃ) এবং হযরত ঈসা (আঃ) সহ অসংখ্য নবী-রাসুলের জীবনচরিত অনন্য উদাহরণ।
এরই ধারাবাহিকতায় যুগে-যুগে জন্ম নেওয়া জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সফল ও খ্যাতিমানদের জীবনচরিত তারই সাক্ষ্য বহন করে। এজন্যই জ্ঞানীরা সফল ও খ্যাতিমান ব্যক্তিদের জীবনী অধ্যয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। প্রকৃত ধর্মীয় ও বাস্তবসম্মত শিক্ষালাভ, বন্ধু ও পারিবারিক কাঠামো এইসব সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়। শত-সহস্র ব্যর্থতা ও প্রতিকূলতা কখনো স্বপ্নবাজদের পরাজয় করতে পারেনা। বরং ব্যর্থতা বা পরাজয়ের গ্লানির মধ্যে ফিনিক্স পাখির ন্যায় বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খুঁজে বেড়ায়। যা তাঁকে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণের দিকে নিয়ে যায়। আমাদের মনে রাখা উচিত, ব্যর্থতা বা পরাজয় মানে নিঃশেষ কিংবা ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়; বরং নির্দিষ্ট লক্ষপানে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।
আত্মহত্যা কিংবা মাদকদ্রব্য সেবন বা দুশ্চিন্তা কোনো সমাধান নয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আত্মহত্যা কিংবা মাদক সেবন করে নিজের স্বপ্নকে তিল তিল করে ধ্বংস করার কোন মানে হয় না। প্রকৃত স্বপ্ন কখনো মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয় না; দিতে পারে না। আমরা সকলেই জানি, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ এই সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আমাদের জন্য। পশুর মতো আচরণ আমাদের মানায় না। শুধু নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা চিন্তা না করে পরের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া উচিত। এটা জগৎ খ্যাত সফল মানুষদের সফলতা লাভের অন্যতম টনিক হিসেবে খ্যাত।
নিজের সুখ আর স্বার্থের কথা যাঁরা চিন্তা করে, প্রকৃত অর্থে, তাঁরা স্বার্থপর। এদের দ্বারা মানবতার কোনো কল্যাণ সাধিত হয়নি, হবেও না। অর্থ আমাদের প্রয়োজন, অর্থের অনস্বীকার্যতা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ অর্থকে ঘিরে আমাদের সুখকল্প/স্বপ্ন আবর্তিত হয়। তার মানে এই নয় যে, অর্থই সকল সুখের মূল কিংবা অর্থই সফলতার একমাত্র মাপকাঠি। আবার, এটাও বলা উচিত নয় যে, অর্থই সকল অনর্থের মূল। নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংস করে সুখস্বপ্ন/সুখকল্পের কবর দিও না। তোমাকে বাঁচতে হবে; তোমার স্বপ্নই তোমাকে এই অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখতে সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাবে, তোমাকে অমরত্ব দান করবে।
আনোয়ার হোসেন
লেখক ও সাংবাদিক