
‘একজন শিক্ষার্থী যখন পরীক্ষায় ভালো করেনা তখন আমরা বলে থাকি ঐ শিক্ষার্থী খুব খারাপ এবং সে সমাজ ও দেশের জন্য বোঝা। কিন্তু বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেন, ‘আমি সবসময়ই পরীক্ষার বিরোধীতা করি, পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহকে মেরে ফেলে। শিক্ষার্থীর জীবনে কোন ভাবেই দুইটির বেশি পরীক্ষা দেওয়া উচিত নয়। আমি হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিনার আয়োজন করতাম, শিক্ষার্থীরা যদি মনোযোগ দিয়ে শুনতো তা হলেই আমি তাদের ডিপ্লোমা দিয়ে দিতাম।’
‘এখন যদি আমি আপনাকে প্রশ্ন করি একজন শিক্ষার্থী ফলাফল খারাপ করা মানে তাঁর জীবনের সবকিছু শেষ ? সবচেয়ে সহজ উত্তর হচ্ছে ‘না’ এবং এই উত্তরটা দেওয়া যতটা সহজ, কোনো কিছুতে ব্যর্থ হয়ে এই সহজ উত্তরটা মেনে নেওয়া তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন।’
‘আমাদের চার পাশের কিছু ঘঠনা দেখে মাঝে মধ্যে আমি চিন্তায় পড়ে যাই, কেননা আমি (ব্যর্থ/ফেল) শ্রেণীকক্ষের শেষ বেঞ্চের ছাত্র ! আমি জীবনে কত বার ফেল (ব্যর্থ হয়েছি) করেছি তা নিজেও বলতে পারবো না। তবে আমার কি ভালো ভবিষ্যৎ নেই ? ঠিক তখন-ই মনে পড়লো, টমাস আলভা এডিসনের কথা। তিনি বলেছেন, ‘কাল আমার পরীক্ষা। কিন্তু এটা আমার কাছে বিশেষ কোন ব্যাপারই না, কারন শুধুমাত্র পরীক্ষার খাতার কয়েকটা পাতাই আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারন করতে পারেনা।’ এমন কথা শুনার পরে যখন নিজকে আবারও বুঝানোর চেষ্টা করি, আগামীতে ভালো করে পরীক্ষা দিবো।’
‘তখন যেন শুনতে পাই নাম-মাত্র পাস করে তো কোন লাভ নেই, চাকরি হবেনা। তখন মনে হয় সত্যি তো আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তো সনদ -এর জন্য গবেষণার জন্য নয়। তাই প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা ভাবি দেশে যত ছাত্র/ছাত্রী পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে, কিন্তু পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয়; এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুন্ঠিত হই।’
‘কখনো স্বপ্ন দেখা আর পরিশ্রম করা ছেড়ে দেওয়া যাবে না সাময়িক ব্যর্থতা আসতেই পারে, এর মানে এই না যে আপনার স্বপ্নকে শেষ করে দিবেন। একভাবে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে না পারলে অন্যভাবে চেষ্ট করে যেতে হবে মনে রাখতে হবে বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত পালিয়ে যাবো না।’
‘বিখ্যাত কিছু ব্যক্তির ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম, যা আপনিও জানেন কিন্তু তার পরেও ব্যর্থ ছেলেটির সাথে আপনিও চলুন দেখবেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম -এর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং তাঁর কর্মের ফলাফল কেমন তা সকলের জানা। বিল গেটস বলেন, ‘একবার পরীক্ষায় কয়েকটা বিষয়ে আমি ফেল করেছিলাম কিন্তু আমার বন্ধু সব বিষয়েই পাশ করে। এখন সে মাইক্রোসফটের একজন ইঞ্জিনিয়ার আর আমি মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা।’ নিউটন, আইনস্টাইন, আব্রাহাম লিংকন, রবীন্দ্রনাথ, মহাত্না গান্ধী, এদের মত অনেক বিখ্যাত মনিষী এসব কাগজ কলমের পরীক্ষায় পাশ করার উপর নির্বর করে বিখ্যাত হয় নাই। তাঁদের জীবনে আছে অনেক ব্যর্থতা আর ফেল করার গল্প যা থেকে আমার শিখতে পারি।’
‘আমাদের সাথেই একদল মানুষ রয়েছে তারা যা করে সে ব্যাপারে তাদের নিজের ওপর কোন ভরসা থাকে না। অর্থাৎ, পদে পদেই মনে হয় যে, আমি কি ঠিক করছি ? কোথাও কি ভুল হচ্ছে ? আরেকদল মানুষ এই অনুভূতির ভেতর দিয়েই যান না – তাঁরাই আত্মবিশ্বাসী।’
‘এই দুই দলের মানুষের মধ্যে পার্থক্য একটাই – যারা আত্মবিশ্বাসী তাঁরা বিশ্বাস করেন যে তাদের মধ্যে যোগ্যতা আছে কাজটা করার, তাঁরা সেই কাজ করার সুযোগ অনুভব করেন। পাশাপাশি তাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁর কাজটা এবং তিনি নিজে মূল্যবান।’
‘অতএব, প্রথমেই আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আপনি মূল্যবান, আপনি যোগ্য, আপনার অধিকার আছে এই সমাজে প্রতিষ্ঠা হওয়া, ভালোবাসা পাবার, সম্মান পাবার এবং এটাই স্বাভাবিক। একবার ভেবে দেখেন, এই পৃথিবীতে আপনার বেঁচে থাকাটা কত সৌভাগ্যের একটা বিষয়। আপনি নিজেকে যত ক্ষুদ্রই মনে করো না কেন, আপনারও একটা শৈশব আছে, কৈশোর আছে, আপনার জীবনেও এমন অনেক মুহূর্ত আছে যা অন্য কারো নেই। আপনারও কোন না কোন বিষয়ে অন্যদের থেকে দক্ষতা আছে।’
‘মাইকেল জর্ডান বলেন, ‘আমি ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারি কিন্তু আমি চেষ্টা না করাকে মেনে নিতে পারিনা।’ এই গল্পটি হয়তো সকলের জানা, লুকা ডি প্যাসিওলি-কে তাঁর ‘মা’ প্রায় সময় বাজার করার জন্য পাঠাতেন। লুকা এতটাই কম হিসাব জানতেন মা’কে ঠিকমত বাজারের হিসাব দিতে পারতেন না। এজন্য মায়ের হাতে মারও খেতেন, কিন্তু পরবর্তীতে বাজারের হিসাব দিতে না পারা ছেলেটি আধুনিক হিসাব বিজ্ঞানের জনক হয়েছে। আমি ব্যর্থ ব্যক্তিদের একজন তাই আমি বলবো, “আমি সফল হতে চাই, ‘ব্যর্থ’ শব্দটিকে সাথে করে।” আমি পৃথিবীর বিখ্যাত কোন ব্যক্তি হতে না পারলেও আমি তাঁদের জীবনের প্রথম অংশ আমি ব্যর্থ।’
আনোয়ার হোসেন
লেখক ও সাংবাদিক